মানুষের কিসের এতো অহংকার

মানুষ পৃথিবীতে আসে শূন্য হাতে, আর শূন্য হাতেই চলে যায়। অথচ মাঝখানের এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমরা অহংকারে ভরে যাই—কখনো দেহের সৌন্দর্যে, কখনো ধন-সম্পদে, কখনো ক্ষমতা কিংবা পদমর্যাদায়। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, মৃত্যুর পর আমাদের কী নির্মম পরিণতি অপেক্ষা করছে।

কবরের মাটিতে শায়িত হওয়ার ২৪ ঘন্টা পর দেহ শক্ত হয়ে যায়, ঠান্ডা হয়ে যায়। রক্ত জমে গাঢ় দাগ পড়ে, আর কোষ ভেঙে ভেতর থেকে দুর্গন্ধ শুরু হয়। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই দেহ ফুলে ওঠে, গ্যাসে ভরে যায়, ত্বক কালচে-সবুজ হয়ে যায়, মুখমণ্ডল ফুলে অচেনা হয়ে পড়ে। চুল, চোখ, নখ সব আলগা হয়ে যায়।

এক মাস পর দেহের বেশিরভাগ মাংসপেশী পচে গলে যায়, ত্বক ভেঙে খুলে পড়ে। মানুষের দেহ তখন আর আগের সেই দেহ থাকে না, শুধু কঙ্কালের আকারে ভাঙা টুকরো হয়ে মাটির সাথে মিশতে থাকে। তিন মাস পেরোলে আর কোনো সৌন্দর্য, কোনো জৌলুশ অবশিষ্ট থাকে না—শুধু হাড় পড়ে থাকে, সেটাও ধীরে ধীরে ভেঙে ধুলো হয়ে যায়।

ভাবুন তো, যে দেহ নিয়ে আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অহংকার করি, সেটাই তো কিছু দিনের মধ্যে মাটির গন্ধে মিশে যাবে। যে সম্পদ-শক্তি নিয়ে আমরা অন্যকে তুচ্ছ করি, মৃত্যুর দিনই তা আমাদের হাত থেকে সরে যাবে। যে গর্ব আমরা বুক ফুলিয়ে দেখাই, তা কবরের প্রথম রাতেই ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।

তাহলে মানুষের কিসের এতো অহংকার?
আসলে দেহ নয়, সম্পদ নয়, সৌন্দর্য নয়—অমর হয়ে থাকবে শুধু কর্ম। মানুষের মুখে মুখে টিকে থাকবে শুধু সেই মানুষ, যে ভালো কাজ করে গেছে, অন্যের উপকার করে গেছে, সত্য ও সততার পথে থেকেছে।

অহংকার মানুষকে বড় করে না, বরং ক্ষুদ্র করে দেয়। আর বিনয় মানুষকে ছোট করে না, বরং অমর করে তোলে। তাই অহংকার নয়, প্রয়োজন বিনয়। কারণ শেষমেশ সবাইকে একই মাটির নিচে নিঃশেষ হয়ে যেতে হয়।

Previous articleআলোর পথে যাত্রা
Next articleনিজেকে জাগাও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here