কথার চেয়ে কাজের শক্তি

কথা দিয়ে মানুষকে কিছু সময়ের জন্য প্রভাবিত করা যায়, কিন্তু কাজের মাধ্যমে মানুষকে চিরকালের জন্য অনুপ্রাণিত করা যায়। একজন নেতার বা বড় মানুষের আসল শক্তি শুধু উপদেশ দেওয়ায় নয়, বরং নিজে সেই উপদেশকে জীবনে প্রয়োগ করার মধ্যে। যখন কেউ নিজের হাতে কষ্ট করে দেখায়, তখন তা অন্যদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।

একজন শিক্ষক যদি শুধু পাঠ্যপুস্তক পড়ে শোনান, তাতে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শিখবে, কিন্তু যদি তিনি নিজেই জ্ঞানের আলোয় ভরা এক চরিত্র হয়ে ওঠেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা তার জীবন থেকে অনেক বেশি শিখে নেবে। একইভাবে, একজন নেতা যদি কেবল কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরতে বলে যান, কিন্তু নিজের কাজে ভেঙে পড়েন, তবে কেউ তাকে অনুসরণ করবে না। কিন্তু যদি তিনি নীরবে সংগ্রাম করে লড়াই চালিয়ে যান, তবে তার চারপাশের সবাইও শক্তি পাবে।

কথার শক্তি হাওয়ার মতো, শোনা যায়, স্পর্শ করা যায় না। কিন্তু কাজের শক্তি মাটির মতো—দৃঢ়, দৃশ্যমান, বিশ্বাসযোগ্য। মানুষ এমন উদাহরণকেই অনুসরণ করে, যা চোখে দেখা যায়। সমাজে যারা বড় পরিবর্তন এনেছেন, তারা বক্তৃতার চেয়ে কাজের মাধ্যমে পথ দেখিয়েছেন।

সত্যিকারের অনুপ্রেরণা আসে তখনই, যখন আমরা দেখি একজন মানুষ নিজের কথাকে কাজে রূপ দিয়েছে। কথার আলো অন্ধকারে সামান্য পথ দেখায়, কিন্তু কাজের আলো পুরো যাত্রাটাই আলোকিত করে। তাই অনুপ্রেরণা দিতে হলে শুধু বললেই হয় না, নিজের জীবন দিয়ে সেই কথার সত্যতা প্রমাণ করতে হয়।

ধরুন, এক গ্রামে ভয়াবহ বন্যা এলো। চারদিক পানি, মানুষের ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে। গ্রামের একজন প্রভাবশালী মানুষ প্রতিদিন শুধু সবাইকে বলছিলেন—“ভয় পেও না, শক্ত থেকো, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু তার নিজের কোনো উদ্যোগ ছিল না, তিনি কেবল কথায় আশ্বাস দিচ্ছিলেন। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে তার কথায় আস্থা হারাতে শুরু করল।

অন্যদিকে গ্রামের এক সাধারণ যুবক নিজের জীবন বাজি রেখে পানিতে নামল। সে নিজ হাতে মানুষকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিল, নৌকা জোগাড় করল, খাবার সংগ্রহ করে বাচ্চাদের মধ্যে বিলিয়ে দিল। কেউ তাকে নেতা ডাকেনি, সে কোনো বক্তৃতাও দেয়নি, কিন্তু তার কাজ দেখে গ্রামের সবাই অনুপ্রাণিত হলো। মানুষ ভাবল, যদি সে এতটা কষ্ট করেও অন্যের জন্য পারে, তবে আমরাও পারি। ধীরে ধীরে সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়াল, একসাথে লড়ল, আর সেই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠল।

এই গল্প আমাদের শেখায়, কথার থেকে কাজের শক্তি অনেক বেশি। কাজই আসল উদাহরণ সৃষ্টি করে, যা মানুষকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। যে মানুষ নিজের কাজ দিয়ে পথ দেখাতে পারে, তার কোনো বড় বক্তৃতার দরকার হয় না। কারণ কাজের মধ্যে এমন এক নীরব জোর থাকে, যা হাজার কথার চেয়েও বেশি অনুপ্রেরণা জাগায়।

Previous articleবৃষ্টিভেজা প্রশান্তি
Next articleগিরগিটি, টুকটুকি ও কুটিকুটি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here