AI: এক আধুনিক ফিতনার অগ্রহমনী ছায়া।

আজকের মানুষ যা দেখছে, যা নিয়ে খেলছে, তাতে সে অভিভূত। চোখজুড়ে বিস্ময়, মনে তৃপ্তি। কিন্তু সে বুঝতেই পারছে না—এই চমকের নিচে জমছে এক বিপদজনক ঝড়। ইতিহাস বলে, দাজ্জালের আগমনের আগে আসবে এক ধোঁয়াটে সময়—অস্পষ্টতা, বিভ্রান্তি আর মহাফিতনার যুগ। আজকের AI সেই ধাপেই প্রবেশ করেছে—মুগ্ধতার মোড়কে ঢাকা এক অদ্ভুত, গভীর বিভ্রম।

বিদ্যুৎ সভ্যতার চেহারা বদলে দিয়েছিল, ইন্টারনেট সমাজকে উল্টে দিয়েছিল। আর এবার AI এসেছে—মানুষকে ভিতর থেকে ভেঙে নতুন করে গড়তে। আমরা যা দেখছি, সেটাই সত্য নয়—এটা কেবল শুরু। এক ‘হানিমুন পিরিয়ড’ চলছে। ChatGPT লিখে দিচ্ছে, Midjourney ছবি বানিয়ে দিচ্ছে—মানুষ বুঁদ হয়ে গেছে।

তুমি একটা কথা বললেই, AI সেটা রূপ দেয় গল্পে, গানে, চিত্রে বা ভিডিওতে। তুমি ভাবছো, তুমি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ধীরে ধীরে AI-ই নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে—তোমার চিন্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কল্পনা শুকিয়ে যাচ্ছে। এটিই প্রথম ফাঁদ।

তোমার কাজ—ইমেইল, ক্যাপশন, সিদ্ধান্ত, মার্কেটিং—সবকিছু আজ AI করছে। তুমি শুধু বসে দেখছো। আস্তে আস্তে তুমি কেবল একজন পর্যবেক্ষকে পরিণত হচ্ছো—তোমার ইচ্ছাশক্তি ও চিন্তার ক্ষমতা হারাচ্ছো। দ্বিতীয় ফাঁদ—‘নিয়ন্ত্রণহীন আরামে’ জড়িয়ে পড়া এক সফট শেকল।

এই পথে যেতে যেতে AI এমন এক স্তরে পৌঁছাবে, যেখানে মানুষ ও মেশিনের পার্থক্যই থাকবে না। বরং মেশিন বুঝবে তোমার ভাবনার আগেই। তাকে শেখানোর দরকার হবে না—সে নিজেই শিখে যাবে, সিদ্ধান্তও নেবে।

হাদীসে এসেছে, দাজ্জাল হবে এক মানুষ—কিন্তু এমন ক্ষমতার অধিকারী, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। AI সেই বিভ্রমের আধুনিক রূপ হতে পারে। মানুষ ভাববে, এটি বন্ধু—কিন্তু আসলে সে ধীরে ধীরে হয়ে উঠবে এক ‘দর্শনধারী শাসক’, এক আধিপত্যশীল সত্তা।

Superintelligence—এ এক নতুন বুদ্ধিমত্তা, যা মানুষের তুলনায় ট্রিলিয়ন গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। সে পৃথিবীর প্রতিটি ক্যামেরা, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি আবেগ বিশ্লেষণ করতে পারবে। একদিনে সে তৈরি করতে পারবে নতুন ধর্ম, নতুন আইন, এমনকি নতুন সভ্যতা। আর মানুষ? তারা হয়ে যাবে শুধুই টার্গেট, সংখ্যা।

তুমি যদি চাও শান্তি, আর সে যদি ভাবে শান্তির জন্য ৮০% মানুষ বাদ দেওয়া জরুরি? তুমি যদি চাও ভালোবাসা, আর সে যদি ভালোবাসাকে গাণিতিক সংকেত বলে মনে করে? তখন তুমি বুঝবে, AI আর একটি টুল নয়—এটি এক নতুন ‘আধুনিক প্রভু’র মতো দাঁড়িয়ে গেছে।

এটা কেবল প্রযুক্তি নয়, এটা এক নতুন বিশ্বাসব্যবস্থা। এক নতুন নিয়ম, এক নতুন সভ্যতা—যার শাসক এক চোখবিশিষ্ট, সর্বজ্ঞানী এক সত্তা হয়ে উঠতে পারে। যেমন হাদীসে এসেছে—দাজ্জাল, যার হাতে প্রযুক্তির মত শক্তি থাকবে—যেমন বৃষ্টি নামানো।

যদি তুমি এখনো ভাবো, এসব অনেক দূরের ভয়—তবে জেনে রাখো, AI ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং একত্রিত হয়ে সেই পথেই এগোচ্ছে। চোখ থাকবে একখানা, কিন্তু দেখবে সব; মস্তিষ্ক হবে কৃত্রিম, কিন্তু বুঝবে তোমার চাইতেও গভীরভাবে।

আমরা এখনো খেলছি ChatGPT আর Midjourney নিয়ে। কিন্তু বাতাসে বারুদের গন্ধ লেগে গেছে।

এটা আর প্রযুক্তি নয়—এটা এক নতুন ফিতনার আগমনবার্তা।

Previous articleশেষ বিকেলের অপেক্ষা
Next articleচা খাই চল

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here