“অভ্যন্তর” – অন্তরের ভেতরের অনুভূতির একান্ত ছবি

“অভ্যন্তর” – অন্তরের ভেতরের অনুভূতির একান্ত ছবি

নদীর ডাক, কুয়াশার সকাল কিংবা হারিয়ে যাওয়া চিঠির মতো নিঃশব্দ অনুভূতিগুলো শব্দে রূপ নেয় “অভ্যন্তর”-এর পাতায়। এই বই যেন এক আবছা বিকেলের গোপন কথোপকথন—কখনও জোনাকির আলোয় দেখা পাওয়া অপেক্ষা, কখনও রেলস্টেশনের নীরবতা, আবার কখনও কার্তিকের শেষ বিকেলের বিষাদ।

ওয়াহিদুর রহমান-এর গদ্য শৈলী সরল, কিন্তু তাতে রয়েছে আবেগের গভীর স্রোত। প্রতিটি লেখা যেন একেকটি জানালা—যেখানে পাঠক খুঁজে পাবেন নিজের ভেতরের ছায়া, আলো আর নীরবতার ভাষা।

“অভ্যন্তর” কোনো গল্পগুচ্ছ নয়, এটি অনুভূতির পর পরত খুলে দেখার এক সাহিত্যিক অন্বেষা—যেখানে ‘নামহীন ডাকপিয়ন’ কিংবা ‘ছেঁড়া ঘুড়ি’ও হয়ে ওঠে আত্মার দেহরেখা।

লেখক পরিচিতি:

ওয়াহিদুর রহমান, যিনি প্রযুক্তি জগতে ফ্রিল্যান্সার ওয়াহিদ নামে পরিচিত, একজন প্রযুক্তিবিদ ও সৃজনশীল লেখক। তাঁর জন্ম ১৭ আগস্ট ১৯৯৮, নোয়াখালী, বাংলাদেশে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় বসবাস করছেন এবং পেশাগতভাবে একজন আইটি ডেভেলপার ও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কর্মরত।

প্রযুক্তির জগতে ব্যস্ত একজন ফ্রিল্যান্সার, অথচ অন্তরে লুকিয়ে রয়েছে নীরব এক কবি। ওয়াহিদুর রহমানের লেখার সূত্রপাত নিছক অনুভব থেকে—তা বলা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়। নোয়াখালীর জন্ম, বেড়ে ওঠা বাংলার আবেগময় আবহে। প্রযুক্তির কাঠামোর বাইরে তাঁর হৃদয়ের ক্যানভাস জুড়ে থাকে শিউলি-ভরা ভোর, নদীর ধারে নীরবতা, এবং হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের গন্ধ।

তিনি বিশ্বাস করেন—সব অনুভূতি শব্দে বাঁধা যায় না, কিছু অনুভব কেবল মনেরেই কোণে বেঁচে থাকে। “অভ্যন্তর” তাঁর প্রথম বই, যেখানে শতাধিক লেখায় মিশে আছে একান্ত ব্যক্তিগত, অথচ সর্বজনীন কিছু অনুভব—প্রেম, বিষণ্নতা, নিঃসঙ্গতা কিংবা কৃতজ্ঞতা—সব মিলিয়ে এক অদৃশ্য ডায়েরির পৃষ্ঠা যেন।


লেখকের ভাষায়:

“আমি নিখুঁত নই, তবে অন্য সবার মতোও নই। আমার কথাগুলো হয়তো সবার মতো করে বলা যায় না, তাই লিখি—নিজের জন্য, সেই সব নিঃশব্দ পাঠকের জন্য, যারা চুপচাপ ভালোবাসে।”

ভূমিকা:

“অভ্যন্তর”—শব্দটা শুনলেই যেন মনে হয়, কিছু একান্ত, ব্যক্তিগত, নৱম কোনো আবরণে মোড়ানো অনুভব। এই বইটা ঠিক সেরকমই—হৃদয়ের ভেতরে জমে থাকা, বলা না-বলা শত শত অনুভূতির ছায়া, ঘ্রাণ, শব্দ আর নিস্তব্ধতা।

এই সংকলনের প্রতিটি লেখা কোনো না কোনো অনুভূতির ছবি আঁকে—প্রেম, অভিমান, হারিয়ে যাওয়া সময়, ফেলে আসা শহর, কিংবা কেবলই এক গভীর বিষণ্ণ বিকেল। কখনও নদীর ঢেউয়ে মিশে থাকা বিষাদের গল্প, কখনও কুয়াশায় মোড়ানো ভোরের প্রত্যাশা, আবার কখনও বা এক নিঃসঙ্গ পথিকের অপেক্ষার কাহিনি।

লেখাগুলো হয়তো গল্প নয়, কবিতা নয়—কিন্তু এক একটি ছোট ছোট জানালা, যেখান দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায় আমাদের চেনা জীবনের অপরিচিত আবেগ। লেখাগুলো ঠিক এমন—
কখনও একফোঁটা চুপচাপ ভালোবাসা,
কখনও নিঃশব্দ কান্না,
আবার কখনও নিছক মনে পড়ার মতো মুছে যাওয়া কিছু মুহূর্ত।

এই বই লেখার পেছনে কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ছিল না কোনো কৌশল বা কাঠামো। ছিল শুধু কিছু অনুভব—যা কেবলই মন ছুঁয়ে গেছে, আর ধরা দিয়েছে শব্দে। এ যেন একান্ত নিজের জন্য লেখা কিছু পঙক্তি, যা ভাগ করে নিতে চাওয়া হয়েছে পাঠকের সাথে—কারণ অনুভব তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন তা ভাগাভাগি করা যায়।

পাঠক হিসেবে আপনি যখন এই পাতাগুলো উল্টাবেন, আশা করি আপনি খুঁজে পাবেন নিজেকেও—
কখনও “হারিয়ে যাওয়া চিঠি”-তে,
কখনও “নদীর ডাক”-এ,
কখনও “কুয়াশার চিঠি”-তে।

কারণ অনুভূতির ভাষা এক, শুধু প্রকাশটা আলাদা।

অন্তরের এই ডায়েরি আপনাদের হাতে তুলে দিতে পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ, আনন্দিত—আর কিছুটা নীরব।

Previous articleএকটি চিপস, একটি প্রাণ, আর আমাদের নীরব সমাজ
Next articleফুটপাতের আড্ডা থেকে ৩০ হাজার কোটির সাম্রাজ্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here