মাইলস্টোন কলেজের দুর্ঘটনার বিভীষিকায় যখন চারপাশে আগুন, ধোঁয়া আর আর্তনাদ—ঠিক তখন এক শিক্ষার্থী পুড়ে যাওয়া ক্লাসরুমের দিকে ছুটে গেল। ভিতরে তার প্রিয় বন্ধু আটকে আছে। দগ্ধ ভবনের ভিতরে প্রবেশ মানে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া—তবুও সে থামেনি।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা তাকে বাধা দেন। সোজা ও নির্মম ভাষায় বলে ফেলেন, “এর কোনো মূল্য নেই। তোমার বন্ধু হয়তো বেঁচে নেই।” কিন্তু ছেলেটা থামে না। তার মধ্যে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, প্রতিশ্রুতি—সব মিলিয়ে এক ধরনের নির্ভীকতা জন্ম নেয়। সে জানে, হয়তো পৌঁছাতে পারবে না। কিন্তু অন্তত চেষ্টা তো করবে।
জ্বলন্ত ভবনের ভিতর প্রবেশ করে সে যখন তার বন্ধুকে খুঁজে বের করে, তখন জীবনের সেই কঠিন মুহূর্তে বন্ধুটি চোখ তুলে তাকায়। পুড়ে যাওয়া শরীর, নিঃশেষপ্রায় নিঃশ্বাস, কিন্তু চেনা মুখ দেখে ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি ফুটে ওঠে।
কোনো চিৎকার নয়, কোনো অভিযোগ নয়। শুধু ছোট্ট একটা বাক্য—যা বন্ধুত্বের হাজার সংজ্ঞার চেয়ে বড়, যা সাহস আর সম্পর্কের চূড়ান্ত প্রমাণ।
“আমি জানতাম তুমি আসবে”
বন্ধুটি পরে মারা যায়। কিন্তু সে মারা যাওয়ার আগে জানত—শেষ মুহূর্তে কেউ আসবে। কেউ যে তাকে ফেলে যাবে না।
এই “কেউ”টিই ছিল বন্ধুত্বের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
ফায়ার সার্ভিসের অফিসার পরে ছেলেটিকে মৃতদেহ নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখে একটু অনুশোচনায় বলেন, “দেখো, আমি তো বলেছিলাম এর কোনো মূল্য নেই। সে তো মারা গেছে।”
ছেলেটি শান্ত গলায় উত্তর দেয়—
“না স্যার, ভুল বলছেন। এটা অমূল্য ছিল। কারণ যখন আমি ওর কাছে পৌঁছাই, তখন সে বেঁচে ছিল। এবং সে আমাকে দেখেই বলেছে—‘আমি জানতাম তুমি আসবে।’”
এই এক লাইন আমাদের শেখায়—বন্ধুত্ব কেবল একসাথে বেড়িয়ে ঘুরে আসা, একে অপরকে মজা করে ডাকাডাকি করা নয়। বন্ধুত্ব মানে জীবন-মৃত্যুর সীমান্তে দাঁড়িয়ে একে অপরকে ধরে রাখা। বন্ধুত্ব মানে পুড়ে যাওয়া ভবনে আগুনের মুখে ছুটে যাওয়া, শুধু একজনের অপেক্ষায়।
এই ছোট্ট ঘটনা হয়তো সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা পাবে না, নিউজফিডে একঘণ্টার বেশি টিকবে না। কিন্তু যারা এই বন্ধুত্বের মানে বোঝে, তারা জানে—এটাই সত্যিকারের সম্পর্ক, যেখানে লাভ-লোকসান নেই, আছে কেবল “আমি জানতাম তুমি আসবে”—এই আশ্বাস।