হার না মানা যাত্রা

হার না মানা যাত্রা সবসময়ই সহজ হয় না। একজন নেতার জীবনে ব্যর্থতা কেবল একটি মুহূর্ত নয়, বরং অগণিত কষ্ট, অপমান আর সন্দেহের সমষ্টি। যিনি নেতৃত্ব দেন, তিনি সবসময় সঠিক থাকেন না, সবসময় সফলও হন না। বরং তার পথচলা ভরে থাকে ভুল সিদ্ধান্ত, অসম্পূর্ণ স্বপ্ন আর অসংখ্য সমালোচনায়। কিন্তু প্রকৃত নেতা আলাদা হয়ে ওঠেন এখানেই—তিনি ব্যর্থতার কাছে মাথা নত করেন না, বরং প্রতিটি পতনকে নতুন শুরুর মঞ্চ বানান।

এক সময় তিনি বড় স্বপ্ন নিয়ে পথে নেমেছিলেন। পাশে ছিলো মানুষ, কণ্ঠে ছিলো আত্মবিশ্বাস, চোখে ছিলো ভবিষ্যতের উজ্জ্বল ছবি। কিন্তু বাস্তবতা তাকে শিখিয়ে দিলো, সাফল্য কখনো সহজে আসে না। প্রথম ব্যর্থতায় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। দ্বিতীয়বার ভুল হলে সমালোচনা আরও তীব্র হলো। আর যখন বারবার হোঁচট খেলেন, তখন মনে হলো যেন সব শেষ—স্বপ্ন, আস্থা, এমনকি নিজের উপর বিশ্বাসও।

কিন্তু তিনি ভেঙে পড়লেন না। রাতের আঁধারে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন—“কেন আমি ব্যর্থ হচ্ছি? কী শিখছি এ থেকে?” সেই প্রশ্নের উত্তরই তাকে নতুন আলো দেখালো। তিনি বুঝলেন, ব্যর্থতা আসলে একেকটি পাঠ, যা মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রতিটি হোঁচটের পর তিনি নিজের ভুল বিশ্লেষণ করলেন, সাহস নিয়ে আবার দাঁড়ালেন, এবং ধীরে ধীরে নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তুললেন।

তার যাত্রা শিখিয়েছে, নেতৃত্ব মানে কখনো না ভাঙা নয়, বরং ভেঙে গিয়েও আবার জোড়া লাগা। তিনি তার দলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করলেন—“আমি পড়েছি, আমি ভুল করেছি, কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।” দলের মানুষও তখন অনুপ্রাণিত হলো, কারণ তারা দেখলো, নেতা নিখুঁত নন, কিন্তু তিনি অদম্য।

সাহিত্যের ভঙ্গিতে, তিনি যেন সেই বৃক্ষ, যাকে ঝড় উপড়ে ফেলতে পারেনি। বারবার ঝড় এসেছিলো, শাখা ভেঙেছে, পাতা ঝরেছে, কিন্তু শেকড় তাকে মাটিতে বেঁধে রেখেছে। প্রতিটি বসন্তে তিনি আবার নতুন কুঁড়ি মেলেছেন, নতুন সবুজে ভরে উঠেছেন।

এই হার না মানা যাত্রাই আসলে নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। সাফল্যের আলো একদিন মিলিয়ে যেতে পারে, প্রশংসার কোলাহল একদিন স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু যে নেতা প্রতিকূলতার পরেও দাঁড়িয়ে যেতে জানেন, তার অনুপ্রেরণা চিরদিন জীবন্ত থাকে। কারণ মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলে শুধু বিজয় নয়, বরং পতনের পর উঠে দাঁড়ানোর সাহস।

Previous articleরাতারগুল
Next articleআলোর পথে যাত্রা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here