সম্পর্কের ভেতরের অদৃশ্য ভার

ছেলেরা ইনকাম করা শুরু করলে সংসার গড়ার চেষ্টা শুরু করে, আর মেয়েরা ইনকাম করা শুরু করলে সংসার ছাড়ার চেষ্টা শুরু করে। কথাটি শুনতে যেমন তিক্ত, বাস্তবতায় এর প্রতিধ্বনি ততটাই স্পষ্ট। সমাজের নিঃশব্দ কোণে, সম্পর্কের ছায়ায় ছায়ায় এই সত্য প্রতিনিয়ত ঘটে চলে — নীরব, কিন্তু নির্দয়।

একজন ছেলে যখন আয় করতে শেখে, তখন তার কাঁধে চেপে বসে দায়িত্বের পাহাড়। মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানো, ছোট বোনের পড়াশোনা, আর একটুখানি স্বপ্ন—নিজের একটা ছোট সংসার। সে তার উপার্জনে গৃহ বাঁধতে চায়, ভালোবাসার মানুষকে নিজের জীবনের অংশ করতে চায়, এবং তার কষ্টে গড়া টাকায় কাউকে সুখ দিতে চায়।
তবুও, সে চায় না কাউকে ছেড়ে যেতে—বরং আঁকড়ে ধরতে চায়, যা কিছু তার আপন।

অন্যদিকে, মেয়ে যখন উপার্জন করতে শেখে, তখন তার ভেতরে জন্ম নেয় এক নতুন জগতের অনুভব—নিজেকে আবিষ্কারের। বহু মেয়ে, বিশেষ করে যারা আগে আত্মনির্ভর ছিল না, উপার্জনের পর বুঝে ফেলে—সে আর কারও করুণা কিংবা সহানুভূতির পাত্র নয়। সে নিজের পথ নিজে তৈরি করতে পারে।
এবং তখন, যদি তার সংসার তাকে বোঝা মনে করিয়ে দেয়, যদি সেখানে ভালোবাসার বদলে কেবল কর্তৃত্ব আর দাবিদাওয়া থাকে—তবে সে সেই সংসার ছাড়তে দ্বিধা করে না।

এখানে একটি তীক্ষ্ণ সত্য আছে—অধিকাংশ মেয়েই স্বার্থপর হয়ে পড়ে না উপার্জনের কারণে, বরং উপার্জন তাদের সেই আত্মবিশ্বাস দেয়, যা আগে কখনও ছিল না। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই—বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সম্পর্ককে ‘প্রয়োজনের পাল্লায়’ ওজন করা হয়।
যেখানে পুরুষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেও পুরনো প্রেমকে আঁকড়ে ধরে রাখে, সেখানে অনেক নারী নিজের প্রথম স্বাধীনতা অর্জন করেই পুরনো সম্পর্ককে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ মনে করে ফেলেন।

তবুও, সবকিছুর মূলে দাঁড়িয়ে থাকে একটিই প্রশ্ন—ভালোবাসা কি সত্যিই স্থায়ী? নাকি প্রয়োজন ফুরালেই সম্পর্কের ভিত টলে যায়?

আজকের সমাজে এই প্রশ্নের জবাব খোঁজে প্রতিটি সম্পর্ক। সেখানে কিছু ছেলে আজও সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখে, আর কিছু মেয়ে—সংসার ভেঙে মুক্তির স্বাদ নেয়।

Previous articleবিশ্বাসের সীমা, সময়ের শিক্ষা
Next articleমানুষ আসলে ব্যর্থ মানুষকে নিয়ে কথা বলে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here