মানুষের মনুষ্যত্ব

মনুষ্যত্ব—এই শব্দটি যেন নিছক একটি শব্দ নয়, বরং মানবতার শাশ্বত চিহ্ন, অন্তর্লীন এক আলোকরেখা, যা মানুষকে পশু থেকে পৃথক করে। মনুষ্যত্ব হলো মানুষের সেই অন্তর্গত গুণ, যা তার চিন্তা, বোধ, বিবেক ও সহমর্মিতার মাধ্যমে বিকশিত হয়। এটি রক্তে লেখা নয়, বংশে ধারিত নয়, বরং আচরণে, ভাবনায়, করুণায়, আর মানুষের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতায় প্রকাশিত হয়।

আজকের এই যান্ত্রিক যুগে, যেখানে মানুষ ধাতব দেহে পরিণত হয়েছে, সেখানে মনুষ্যত্ব যেন ক্রমশ লুপ্তপ্রায় প্রাণীর মতো বিলীন হতে বসেছে। আমরা সভ্যতার মোড়কে অসভ্যতার অনুশীলনে রত, যেখানে ব্যক্তি স্বার্থ, প্রতিযোগিতা আর ভোগবিলাসের দৌঁড়ে মনুষ্যত্বকে পদদলিত করে চলেছি নিত্যদিন।

মনুষ্যত্বের প্রকৃত রূপ আমরা দেখি একজন ক্ষুধার্তকে অন্ন দিয়ে তৃপ্ত করার মধ্যে, একটি পথশিশুর চোখে হাত বাড়িয়ে হাসি ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যে, কিংবা নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে বৃহত্তর কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার মধ্যেই। মানুষ তখনই প্রকৃত অর্থে মানুষ হয়ে ওঠে, যখন তার হৃদয়ের দরজা কেবল নিজের নয়, অন্যের জন্যও উন্মুক্ত থাকে।

বিবেক ও করুণা—এই দুটি গুণ হলো মনুষ্যত্বের দুই অঙ্গ। একজন মানুষ হয়তো পাণ্ডিত্য অর্জন করতে পারে, সম্পদে অভিজাত হতে পারে, কিন্তু যদি তার মধ্যে সহানুভূতির ন্যূনতম সঞ্চার না থাকে, তবে সে মানুষ নয়, কেবল এক জীবন্ত দেহমাত্র।

মনুষ্যত্বের এই আলো আমরা যদি অন্তরে ধারণ করতে পারি, তবেই এই দুনিয়ায় অন্ধকার কমে আসবে। হিংসা পরাজিত হবে ভালোবাসায়, অহংকার মাথা নোয়াবে বিনয়ে। আর তখনই পৃথিবী হবে মানুষের, মনুষ্যত্বের, এবং সত্যিকার সৌন্দর্যের আধার।

তাই আজ, এই যান্ত্রিক সময়ে দাঁড়িয়ে, একটিবার নিজেকে প্রশ্ন করা প্রয়োজন—“আমি কি কেবল মানুষ, না মনুষ্যত্বের বাহক?”

এই প্রশ্নের উত্তরেই নিহিত রয়েছে মানবতার ভবিষ্যৎ।

Previous articleটুয়েটের তেলাপোকা তত্ত্ব: এক বিপ্লবী আবিষ্কার!
Next articleনিজের কাছে নিজের দুঃখ পাহাড় সমান, অন্যের কাছে দুই লাইনের গল্প।

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here