আজকের মানুষ যেন ভুলে গেছে নিজের সীমা। সামান্য সাফল্যে, সামান্য প্রাপ্তিতে আমরা গর্বে উথলে উঠি। আজ যাকে ঠকিয়ে তুমি হাসছো, কাল সময়ের ফেরে অন্যের কাছে ঠকে তুমি নিজেই কেঁদে উঠবে। সময় নীরব, কিন্তু সে ন্যায়বিচার করে নিজস্ব নিয়মে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা ভাবি, আমরা অজেয়। অথচ মৃত্যু কতটা নিকটবর্তী, তা আমরা বুঝতেই চাই না। এক মুহূর্তেই থেমে যেতে পারে এই স্পন্দন, থেমে যেতে পারে জীবনের সমস্ত গতি। তারপর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না—থাকে শুধু একটিমাত্র সত্য, সমাপ্তি।
তবুও কিসের এতো অহংকার? কেন এতো হিংসা, বিদ্বেষ, ষড়যন্ত্র, চাতুরী? মানুষে মানুষে এই অবিশ্বাস, প্রতিযোগিতা, ক্ষুদ্রতা কি সত্যিই জীবনের লক্ষ্য? আমরা ভুলে যাই, মানুষ হওয়াই জীবনের সবচেয়ে বড় পরিচয়। ডিগ্রি, চাকরি, অর্থ বা পদমর্যাদা নয়, আসল মূল্য মনুষ্যত্বে। এসব বাহ্যিক প্রাপ্তি কেবলই ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু একজন মানুষের আচরণ, তার সততা ও সহানুভূতি তাকে সত্যিকারের মহান করে তোলে।
শরীর থেকে আত্মা একবার বেরিয়ে গেলে, তখন আমরা আর কিছুই করতে পারি না। তখন একটি পাখিকেও ঠেকানোর শক্তি থাকে না আমাদের। অথচ জীবিত অবস্থায় আমরা সেই শক্তিরই বড়াই করি, নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে অন্যকে ছোট করার আনন্দে মেতে থাকি।
এই অহংকার, এই শক্তির প্রদর্শন শেষ পর্যন্ত অর্থহীন। মৃত্যু সব দম্ভকে নিঃশেষ করে দেয়, রেখে যায় কেবল মানুষটার কর্ম ও চরিত্রের ছাপ। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। সৌন্দর্য ম্লান হয়, সম্পদ হারিয়ে যায়, খ্যাতি ভুলে যায় মানুষ। বেঁচে থাকে কেবল একটাই জিনিস—মনুষ্যত্ব। তাই প্রয়োজন নিজের ভেতরে ফিরে দেখা। প্রয়োজন এই প্রশ্নটা করা—যা নিয়ে এত অহংকার করছি, তা কি সত্যিই আমার? নাকি কেবল সময়ের ধার দেওয়া কিছু ক্ষণস্থায়ী প্রাপ্তি?