শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসে কেউ হয়তো স্বপ্ন আঁকছিল, কেউ পরীক্ষা দিচ্ছিল, কেউবা ক্লাসে মনোযোগী হয়ে শিখছিল—ঠিক তখনই আকাশ থেকে আগুন নেমে এলো। উত্তরার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে ভেঙে পড়লো একেবারে শিক্ষার্থীদের মাথার উপর! আগুনে ঝলসে গেলো কত তাজা মুখ, মায়ের কোলে থাকা শিশুর শরীরও রেহাই পেল না। আরেকজন মায়ের বুক শূন্য করে চলে গেলেন—ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর।
প্রশ্ন জাগে—এই প্রশিক্ষণ ঢাকাতেই কেন? এতো জায়গা থাকতে ঠিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে? সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর কি এমনই অধিকার এই ছোট্ট শহরের উপর? ঢাকার এক-তৃতীয়াংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে কেন থাকবে?
আমরা যারা সাধারণ মানুষ—প্রতিদিন রাস্তায় বের হই ভয় নিয়ে, হাসপাতাল গিয়ে ফিরি অনিশ্চয়তায়, সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে ফিরে যাই দুশ্চিন্তায়। এখন আকাশ থেকেও যদি মৃত্যু নেমে আসে, তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ?
একটা যুদ্ধবিমান রাস্তায় নামলে তা শুধু পাইলটের মৃত্যুই নয়, সঙ্গে নিয়ে আসে সাধারণ মানুষের জীবন হরণের দায়। বাইক চালানো শেখার সময়ও আমরা খোলা মাঠ খুঁজি—তাহলে বিমান প্রশিক্ষণ চলবে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের উপর দিয়ে?
আরও একবার বলি—এই মৃত্যুর দায় শুধু প্রযুক্তির নয়, শুধুমাত্র দুর্ঘটনারও নয়, এটা দায়িত্বহীনতার দায়। এটা জনগণের নিরাপত্তাকে অবজ্ঞা করার পরিণতি।
আরও একবার বলি—আমাদের দেশের ফাইটার জেটগুলো যখন ঝরিয়ে নিচ্ছে দক্ষ পাইলট, আর আশেপাশের দেশে ভাঙছে অদক্ষ চালকদের হাতে—তখন প্রশ্ন ওঠে, আপনারা কি আধুনিকায়ন করবেন না? না হলে বিলুপ্ত করুন এই লাঠিয়াল বাহিনী, যারা যুদ্ধ নয়, প্রশিক্ষণেই মানুষ মারছে!
স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদের ক্ষত শুকানোর আগেই এল নতুন ক্ষত—তৌকির ইসলাম সাগর।
প্রতিবার মায়েদের কোল খালি করে যারা শোক বার্তা পাঠান—তাদের বলি, আমরা আর চোখের জল দিয়ে আপনাদের ব্যর্থতা ধুতে চাই না।
আজ জাতির কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম—এই দেশে আমরা কোথায় নিরাপদ? কোথায় বাঁচার গ্যারান্টি? কোথায় আস্থা রাখবো, যদি আকাশ থেকেও আগুন নামে?